ROBIN RAHMAN

Videos

This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.

Thursday, November 1, 2018

Iqbal memorial govt. degree College

Iqbal memorial govt. degree College

Thursday, August 25, 2016

★ভালোবাসার উপহার★

- খবরদার একদম ঘরে ঢুকবে না, বাইরে দাঁড়িয়ে থাক ।
-- তাহলে দরজা খুলেছ কেন ?
-- দরজা খুলেছি তোমাকে দেখার জন্য ।
-- আমার অপরাধটা কি বলবে তো ?
-- তোমার কাছে ঘড়ি আছে ?
-- আছে তো
-- টাইম দেখ কয়টা বাজে
-- দশটা টা বাজে মাত্র
-- অফিস ছুটি হয়েছে কয়টায় ?
-- কয়টায় আবার পাঁচটায়
-- তাহলে এতো দেরি হলো কেন ?
-- ইয়ে মানে রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল
-- জ্যাম ছিল না অন্য কোন মেয়ের সাথে টাঙ্কি মেরে আসলা ।
-- ছিঃ ছিঃ ছিঃ তুমি এই সব কথা বলতে পারলা । তুমি না আমার ময়না পাখি প্লীজ ঘরে ঢুকতে দেও । তোমার জন্য না একটা গিফট এনেছি
.
এই কথা বলে রিহান তার স্ত্রীর শ্রাবন্তি কে বাহু ডোরে জড়িয়ে ঘরে প্রবেশ করে । আসলে গাড়ির জ্যাম টেম কিছুই না । রাস্তায় কলেজ লাইফের বন্ধুদের সাথে দেখা আর সেখানেই দেরি । বন্ধুদের আড্ডায় মেতে থাকায় শ্রাবন্তির কথা ভুলেই গিয়েছিল ।
.
-- কই দেখি আমার জন্য কি গিফট এনেছ ।
-- তাহলে চোখ বুঁজ
.
শ্রাবন্তি চোখ বুজে কিন্তু রিহানের ফাঁকিবাজি । আলতো করে শ্রাবন্তির কপালে একটা চুমে এঁকে দেয় ।
..
-- এটাই বুঝি তোমার গিফট
-- হ্যাঁ এটাই আমার গিফট । ভালোবাসার গিফট ।
-- কিন্তু তোমাকে আজ একটা গিফট দিব সেই গিফটের কথা শুনলে তুমি পাগল হয়ে যাবে ।
-- কি সেটা ।
-- তাহলে তুমিও চোখ বুঁজ ।
.
রিহান চোখ বুজে শ্রাবন্তি রিহানের কানে কাছে মুখ এনে আস্তে করে বলে সে কনসিভ করেছে ।
.
রিহান কথাটা শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থাকে, তারপর চিৎকার দিয়ে ঘর উলট পালট করতে থাকে । শ্রাবন্তিকে পাজাকুলে নিয়ে কিছুক্ষণ লম্ফ জম্ফ করে । আসলে রিহান এতোটাই খুশি হয়েছে যে, যা কল্পনাতীত ।
.
দিন যায় মাস যায় শ্রাবন্তির গর্ভে ভ্রুণ বড় হতে থাকে । অন্যদিকে শ্রাবন্তি অসুস্থ হতে থাকে । স্বাভাবিক উপসর্গের বাইরে ও কিছু জটিলতায় শ্রাবন্তি অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে থাকে । রিহান এখন সময় মতো বাসায় ফেরে ঘরের কাজ গুলো শ্রাবন্তিকে করতে দেয়না । পরম মমতায় আর ভালোবাসায় শ্রাবন্তিকে আগলে রাখে । সময় মতো চেকআপ করা, ডাক্তার দেখানো কোন কিছুতেই ত্রুটি রাখে না, কিন্তু শ্রাবন্তির কেন যেন মনে হয় সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে সে মারা যাবে । তাই বারবার রিহান কে অনুরোধ করে আমার সন্তান কে দেখে রেখ । কোন রকম কষ্ট যেন সে না পায় সে, আমি হয়তো বাঁচবো না । রিহান শ্রাবন্তির মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে থাকে কিচ্ছু হবে না তোমার, এতো ভয় পেও নাতো ।
.
শ্রাবন্তির ব্যথা উঠেছে । ডাক্তারের তারিখ অনুযায়ী রিহান অফিস থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে রেখেছে আগেই । যেদিন খুব বেশী প্রয়োজন সেদিন রাস্তায় জ্যাম হয় প্রচুর । তবুও শত বিপত্তি পেরিয়ে শ্রাবন্তি কে ক্লিনিকে নিতে সক্ষম হয় রিহান ।
.
ডাক্তার জানিয়ে গেছেন স্বাভাবিক ডেলিভারি হবে না তাই প্রয়োজন সিজারের । কিন্তু রিহানের কেন যেন ভয় করছে । বারবার শ্রাবন্তির কথাটা মনে পড়ছে । তবুও অনুমতি দিতে বাধ্য হয়, কিছুই করার নেই
.
অপারেশন থিয়েটারের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে রিহান । অতীতের কথা গুলো মনে পড়ছে বারবার । শ্রাবন্তির সাথে খুনসুটি, ভালোবাসা , আদর, অভিমান । কতো স্মৃতিই না জড়িয়ে আছে এই ছোট্ট সংসার জীবনে । অসম্ভব রকমের ভালোবাসা পেয়েছে শ্রাবন্তির কাছ থেকে । আজ যদি শ্রাবন্তির কিছু হয়ে যায় তবে মনে হয়, তার পক্ষে বেঁচে থাকাই কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়বে । তবুও আল্লাহর ভরসা । আল্লাহ মহান অবশ্যই তার অমঙ্গল চাইবেন না তিনি ।
.
ভেতর থেকে বাচ্চার কান্নার শব্দ আসছে । রিহান যতটা না খুশি তার থেকে বেশি চিন্তিত শ্রাবন্তিকে নিয়ে । শ্রাবন্তির কি অবস্থা জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বেরিয়ে আসলেন । মুখে স্মিত হাসি ।
.
-- Congratulations মিস্টার রিহান আপনি মেয়ের বাবা হয়েছেন ।
-- আলহামদুলিল্লহ্ , কিন্তু ডাক্তার শ্রাবন্তি কেমন আছে ?
-- হ্যাঁ, মা মেয়ে দুইজনেই ভালো আছে । সামান্য ব্লাডিং হয়েছিলো । এখন রোগী কে রক্ত দেওয়া হচ্ছে । আশা করি ঘন্টা দুই এক এর ভেতর সব ঠিক হয়ে যাবে
.
শ্রাবন্তির পাশে, সুন্দর ফুট ফুটে এক রাজ কন্যা কে নিয়ে বসে আছে রিহান । কি তুলতুলে শরীর । মায়াবি চেহারা । দেখতে তার মতোই হয়েছে । মনে হচ্ছে তার দিকে তাকিয়ে আছে । এই ছোট্ট বাবুর দিকে তাকিয়ে হাজার বছর পার করে দেওয়া যায় । শ্রাবন্তি রিহান কে জিজ্ঞেস করে তুমি খুশি হয়েছ ? রিহান শ্রাবন্তির দিকে টলমল চোখে তাকায় । এক সময় চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়ে । সেই গড়িয়ে পড়া অশ্রু টুকু বলে দেয় তার মতো খুশি এই মুহূর্তে পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই ।

সাইকো

-আসতে পারি?
মোটা ফ্রমের চশমাটা চোখের দিকে আরেকটু এগিয়ে আসিফ দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে। নিপা তার রুমে বসে হুমায়ন আহমেদের একটা উপন্যাস পড়ছিল। বই থেকে চোখ উঠিয়ে আসিফকে দেখে বিছানা থেকে নেমে এল। আসিফের সামনে এসে বলল
-স্যার। ভেতরে আসুন।
.
আসিফ দরজা পার হয়ে নিপার রুমে ঢুকল। নিপা চেয়ার এগিয়ে দিল। আসিফ চেয়ারে বসতেই, নিপা আরেকটি চেয়ার টেনে বসল। আসিফকে দেখে মাঝে মাঝে নিপা অবাক হয়। একজন মানুষ এএতটা নম্র, ভদ্র কিভার হতে পারে! যেমন তার ব্যাবহার, তেমন তার কথাবার্তা।
.
-তো, আজকে কোন অধ্যায় পড়াব?
আসিফের কথা শুনে নিপার একটু মন খারাপ হয়ে গেল। এই মানুষটা এমন কেন! পড়ানো ছাড়া আর কিছু বুঝেনা! প্রতিদিন এসে শুধু পড়ানোর কথা বলে। কেমন আছে সেটাও জানতে চায় না। নিপা দেখতে কি এতটাই খারাপ নাকি! অনেক ছেলেই তো নিপার জন্য দিওয়ানা। তাহলে আসিফ কেন এভাবে কথা বলে!
.
-স্যার। আজকে আমি পড়ব না।
নিপার কথা শুনে আসিফ মুচকি হেসে বলল
-তাহলে কি করবে!
নিপা এবারে আসিফের দিকে তাকাল। আসিফ নিপার দিকে ভালভাবে দেখেছে নাকি জানেনা। দেখলে হয়ত কিছু বলত। নিপা এত সুন্দর করে সেজেছে। কিন্তু আসিফ সেটা দেখছেইনা!
.
-স্যার। আমাকে একটু দেখুন। আমি কত সুন্দর করে সেজেছি।
নিপা কথাগুলো বলতে গিয়ে থেমে গেল। নিজে থেকে না দেখলে, ডেকে কাউকে নিজের রুপ দেখানো যায়! নিপা মুখ ফুটে বলতে গিয়ে আবার'ও থেমে বলল
-আজ আমরা গল্প করব।
আসিফ এবারেও সেই মুচকি হেসে বলল
-গল্প!
-হ্যা। আপনি গল্প বলবেন। আমি শুনব।
.
নিপার কথা শুনে আসিফ চুপ করে আছে। আসিফের কি হল নিপা বুঝতে পারছে না। এই মানুষটাকে বোঝা বড় দ্বায়। তবুও বোঝার চেষ্টা করছে।
.
-আমিত গল্প পারিনা।
আসিফের মুখে এমন কথা শুনে নিপা চুপ করেই আছে। মুখ খুলে বলল
-তাহলে আপনার কথা বলুন।
-আমার কি কথা বলব?
-এই আপনার জীবন, স্বপ্ন। এইসব।
-তেমন কোন কথা নেই।
আসিফের কথা শুনে নিপা হতাশ হয়ে গেল। একটা মানুষ কি এত মেপে কথা বলে! একটা কথাও কি বেশি বলা যায়না?
.
-আচ্ছা, আপনি কারো প্রেমে পরেছেন?
নিপা কথাটি বলে নিজেই লজ্জা পেল। এভাবে কথাটি না বললেও হত। তবুও আসিফের প্রতিক্রিয়া বোঝার জন্য তার মুখের দিকে তাকাল। আসিফ বলল
-হ্যা পরেছি।
নিপা আসিফের কাছে এমন জবাব আশা করেনি। কথাটা শুনে একটু আহত হল।
.
-কার প্রেমে পরেছেন?
আসিফের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসু ভাব নিয়েই প্রশ্নটা করল। আসিফ চুপ থেকে জবাব দিল
-কবিতার।
নিপা আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল
-কবিতা আপু কেমন দেখতে?
-অনেক সুন্দর।
-আচ্ছা উনি থাকেন কোথায়?
-কবির কল্পনায়, কবির লেখার মাঝে।
আসিফের কথা শুনে নিপা নিজের বোকামির জন্য একটা হাসি দিল। সে লেখা কবিতার কথা বলেছে। আর নিপা ভেবেছিল মেয়েটির নাম কবিতা!
.
আসিফ এখনো চুপ করেই আছে। নিপা একটু খুশি মনেই বলল
-স্যার। আজকে আমি আর পড়ব না।
-সেটা তো আগেই বলেছ।
-হুম।
-তবে আমি এখন আসি।
.
আসিফ বেড়িয়ে যেতেই নিপা একটু খুশি হল। এতদিন পরে জানতে পারল ভালবাসা শুধু কবিতার জন্য। কোন মেয়েকে সেভাবে ভালবাসে না।
.
এতদিন ধরেও আসিফের মুখ থেকে খুব বেশি কথা বের করা যায়নি। আসিফ নিপার শিক্ষক। সে এবারে অনার্স এ পড়ছে। আসিফের থাকার তেমন ভাল জয়গা নাহলে নিপাদের বাড়িতে থাকে। নিপাকে নিয়মিত পড়ায় সে। লজিং মাস্টার বলা যেতে পারে।
.
★★
.
রাতে খেতে বসতেই নিপার বাবা বলল
-একি। আসিফকে দেখছিনা যে!
নিপার মা বলল
-একবার ডেকেছিলাম। কিন্তু আসেনি।
-নিপা, যা তোর স্যারকে ডেকে নিয়ে আয়।
.
নিপা আসিফের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে বলল
-আসব?
আসিফ বিছানায় শুয়ে বলল
-এসো।
.
নিপা রুমে ঢুকে দেখল, আসিফ শুয়ে আছে। কাথা গায়ে দিয়ে এইসময় শুয়ে থাকতে দেখে অবাক হল। নিপা বলল
-আপনাকে খাওয়ার জন্য ডাকছে।
-খেতে ইচ্ছা করছে না। শরীর ভাল লাগছে না।
-জ্বর আসেনি তো?
-হতে পারে।
আসিফের কথা শুনে নিপা চিন্তিত হয়ে গেল। তবুও চুপ করে রুম থেকে বেড়িয়ে এল। নিপার ইচ্ছা করছিল, আসিফের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে। কিন্তু কোন এক বাধায় সেটা হল না।
.
নিপার হাতে খাবারের পাত্র দিল তার মা। আসিফের রুমে দিয়ে আসতে বলল। আসিফের অসুস্থতা শুনে নিপার বাবাও কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলল
-ডাক্তার ডাক দিলেই তো হত।
.
নিপা রুমের খাবার রেখে আসিফের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। আসিফ নিপাকে দেখে বলল
-রেখে যাও। আমি পরে খেয়ে নিব।
-আচ্ছা।
.
নিপা আসিফের রুম থেকে বেড়িয়ে এসে খাবার টেবিলে বসল। নিপার বাবা বলল
-কেমন অবস্থা তোর স্যারের। বেশি অসুস্থ নাকি।
-তেমন না।
-তোর স্যারের খেয়াল রাখিস। কোন সমস্যা হলে ডাক্তার ডাক দিস।
-আচ্ছা।
.
নিপার বাবা খাওয়া শেষ করে উঠে গেল। আসিফ এ বাড়িতে লজিং থাকলেও নিপাদের পরিবারের'ই একজন হয়ে গিয়েছে। আসিফের ব্যাবহার, কথা, ভদ্রতা দেখে মুগ্ধ হতে বাধ্য।
.
নিপা অল্প কিছু খেয়ে শুতে চলে গেল। শুয়ে নিপার চোখে ঘুম নেই। বারবার মনেহচ্ছে, আসিফ এখন কেমন আছে। আসিফের অসুস্থতা তাকে ভাবিয়ে তুলছে।
.

.
নিপা কলেজ থেকে ফিরে মাকে ডাকতে শুরু করল। নিপার বাবা-মা তো বেড়াতে গিয়েছে। তাহলে ডাকলে শুনবে কিভাবে! নিপা ব্যাপারটা মনে করেই চুপ কর ব্যাগটা বিছানার উপর রেখে দিল।
.
নিপার খুব পানি তৃষ্ণা পেয়েছে। এই গরমের মধ্যে পানি পিপাসা পাবেই না কেন! শরীরের ঘামের সাথে পানি ফুরিয়ে যায়। ছোটবেলায় দাদির মুখে তাল পাকানো গরমের কথা শুনেছিলাম। এই গরমকে মনেহয় সেই গরম বলা যায়।
.
নিপা ঢক ঢক করে দুই গ্লাস পানি খেয়ে চেয়ারে চুপ করে বসল। মনেহয় কলিজাটা ঠান্ডা হয়ে গেল। ফ্যানের নিচে বসে শরীরের ঘাম ঝড়া কমেছে। পানি খেয়ে আরাম লাগছে বটে।
.
নিপা খাওয়ার জন্য খাবার রুমে আসল। ক্ষুধা লেগে পেটটা ডাকাডাকি শুরু করেছে। বেশি খেলে আর বেশি ক্ষুধা পেলে পেট ডাকাডাকি শুরু করে দেয়। খাবার এনে টেবিলে রাখতেই আসিফের কথা মনে পরে গেল। নিপার মা যাওয়ার সময় আসিফের দুপুরের খাবার দিতে বলে গিয়েছে। নিপার মা বাড়িতে থাকলে সেই করত। কিন্তু নিপার মা বাড়ি না থাকায় নিপাকেই খাবার দিতে হবে।
.
নিপা আসিফকে ডাকার ডাকার জন্য তার ঘরে গেল। আসিফকে কয়েকবার ডাকার পরেও কোন সাড়াশব্দ নেই। নিপা চৌকাঠ পেড়িয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে পরল। রুমের ভেতরে আসিফ নেই। তার মানে এখন'ও বাসায় ফিরেনি! বাইরে আছে মনেহয়!
.
নিপা বেড়িয়ে আসতে গিয়ে আবার থেমে গেল। টেবিলের উপরে রাখা ডাইরিতে চোখ পরে আগ্রহ জাগল। যে আগ্রহ তাকে পিছন থেকে টেনে ধরল মনেহয়।
.
নিপা টেবিলের উপরে রাখা ডাইরি হাতে নিল। কারো ব্যাক্তিগত ডাইরি, তার অনুমতি ছাড়া নাকি ধরতে নেই! নিপার মাঝে সেসব চিন্তা একবার'ও আসল না।
.
নিপা ডাইরি খুলতেই একটা কবিতা পড়তে থাকল। কবিতার লাইনগুলো মনের মাঝে মিশে যাওয়ার মত। একটা কবিতার কিছু লাইন
"তোমারে দেখিলাম শয়নে ভাবিয়া
তোমারে দেখিলাম সামনে রাখিয়া
নিরবে দেখি তোমারে চাহিয়া
তুমি রও মোরে ভাবে মিশিয়া"
.
একের পর এক পাতা উল্টাচ্ছে আর কবিতার মাঝে ডুবে যাচ্ছিল। কবিতার ভাব নিপাকে ভাবিয়ে তুলছে। নিপার ক্ষুধা লাগার ব্যাপার মনে নেই। নিপা খাওয়ার কথা কথা ভুলে গিয়েছে।
.
-নিপা কখন এলে!
আসিফের কথা শুনেই চমকে গেল। ডাইরিটা টেবিলে রাখতেই আসিফ বলল
-কবিতা পড়ছিলে!!
-হুম। ভালই লাগল। আপনি লিখেছেন?
-হ্যা।
-আপনাকে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে আসছিলাম।
-আচ্ছা। তুমি খাবার রেডি কর। আমি আসছি।
.
নিপা খাবার টেবিলে মাথা নিচু করে বসে আছে। নিপার লজ্জা লাগছে। কারো ডাইরি লুকিয়ে পড়তে গিয়ে ধরা খেলে এইরকম হওয়ার কথা।
.
-কি ব্যাপার! এভাবে মাথা নিচু করে বসে আছ কেন!
আসিফের কথা শুনে নিপার অবাক লাগছে। আসিফের কথার সুর যেন আজ অন্যরকম মনেহয়। আসিফ এভাবে কথা বলছে! নিপা আস্তে করে বলল
-তেমন কিছু না। এমনিই।
.
চুপচাপ করেই দুজন খাওয়া শেষ করল। নিপা রুমে এসে ভাবছে এখন পড়তে যাবে। তার আসিফের সামনে যেতে ইচ্ছা করছে। বই আর খাতা নিয়ে নিপা রুম থেকে বেড়িয়ে পরল।
.
-স্যার। আসব?
আসিফ টেবিলে বসে কিছু একটা লিখছিল। নিপাকে দেখে বলল
-আস।
নিপা আসিফের সামনের চেয়ারে বসল। বসে বলল
-স্যার। এখন পড়াবেন?
-হ্যা। সমস্যা নাই।
.
-স্যার চা খাবেন?
নিপা কথাটা যেন মুখ ফসকে বেড়িয়ে গিয়েছে। তবুও মনেহয় আজ নিপার সাহস বেড়ে গিয়েছে। নিপার কথা শুনে আসিফ মুচকি হাসি দিল। আসিফের হাসি দেখে নিপা বোকা হয়ে গেল।
.
-দুই কাপ চা বানিয়ে আনতে পার। তবে দুপুরে চা খাওয়ার ব্যাপারটা কেমন যেন!
নিপা মুচকি হেসে বলল
-তবুও নিয়ে আসি। চা খাবেন তো!
-আনলে খেতেই পারি।
.
নিপা চা বানাতে বানাতে অনেক কিছু ভাবছে। আজ আসিফের মাঝে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। কবিতা পড়া দেখে কি সে কিছু ভেবেছে! নাকি নিপাকে আসিফও... ভাবতেই নিপার কেমন যেন লাগছে।
.
-এই নিন চা।
আসিফ চায়ের কাপ হাতে নিয়ে নিপাকে বসতে বলল। নিপা পাশে বসতেই আসিফ চায়ে চুমুক দিল। নিপা চা খেতে খেতে একটু আনমনা হয়ে গিয়েছে।
.
-নিপা, আমি কিন্তু ভাল চা বানাতে পারি।
-তাই নাকি! আমাকে এক কাপ খাওয়াবেন?
-আচ্ছা বানিয়ে খাওয়াতে পারি। তুমি বস।
আসিফ চেয়ার ছেড়ে রান্না ঘরের দিকে হাটা দিল।
.
আসিফ চলে যেতেই নিপা ভাবছে, আজ সে কিছু বলে দিবে নাকি! কিন্তু মেয়ে হয়ে কিভাবে ছেলেটিকে বলবে! এটাত ছেলেটির কাজ। আসিফকে দেখে মনেহয় আজ কিছু বলে দিতে পারে।
.
-এই নাও। খেয়ে দেখ। খেয়ে বলবে কেমন লাগছে।
নিপা আসিফের হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিল। গরম চা ফু দিয়ে না খেলে জিহ্বা পুড়ে যায়। কিন্তু নিপা তেমন কিছু বুঝছে না। চা যে অনেক সুন্দর হয়েছে সেটা বলতেই হবে।
.
-চুপ করে আছ যে! কিছু বল।
আসিফের কথা শুনে নিপা ভাবনার জগত থেকে বাস্তবে ফিরে এল। এতক্ষণে চা ফুরিয়ে গিয়েছে। আসিফ নিপার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিপা শুধু বলল
-চা অনেক ভাল হয়েছে।
.
নিপার মাথাটা কেমন যেন ধরে আসছে। ঘোরের মধ্যে আছে বলেই কি এমন লাগছে! নিপা ভাবতে ভাবতে আসিফের কাজ দেখে চমকে গেল। চমকে যাওয়ার সাথে সাথে খুশিও হয়েছে। এভাবে যে আসিফ এমন কাজ করবে, সেটা নিপা কোনদিন ভাবেনি।
.
আসিফ নিপাকে জড়িয়ে ধরেছে। মাথা ঘুরলেও আসিফের বুকে এসে নিপা একটু বেশি খুশি। এভাবে আজ আসিফের ভালবাসার কথা জানতে পেরে খুশি।
.
-চন্দ্রবতি, কেমন আছ?
আসিফের মুখে এই ডাক শুনে চমকে উঠল। এই ডাকে আসিফ ডাকছে কেন! এই ডাকেতো রাহাত নিপাকে ডাকত। তাহলে আসিফ কিভাবে! নিপার মাথা ঘুরলেও কথাগুলো ভাবছে।
.
-ডাক শুনে চমকে গেলে! রাহাতকে জেলে দেখে আমিও চমকে গিয়েছিলাম। ছয় বছর জেল হওয়ার পরে আমিও চমকে গিয়েছিলাম।
নিপা চুপ করে আছে। আসিফ নিপাকে বিছানায় ফেলে দিয়েছে। আসিফের চোখে যেন রক্ত চড়ে গিয়েছে। শান্ত মানুষটার এমন রুপ দেখে নিপাও ভরকে গিয়েছে।
.
-রাহাত তো তোমাকে ভালবাসত। তুমিও তাকে ভালবাসতে। পরিবারের কাছে ভাল সাজতে রাহাতকে ইফটিজিং কেসে ফাঁসালে! প্রেমে তো দুজন সমান ভাবে ভুমিকা রেখেছিলে। তবে শাস্তি একজন পেল কেন!
নিপা চুপ করেই আছে। নিপার কাছে কোন উত্তর জানা নেই। কি বলবে সে!
.
আসিফ নিপাকে আবার'ও বুকে জড়িয়ে নিতেই নিপা সস্তি ফিরে পেল। আসিফ নিপাকে বিছানার সাথে ঠেসে ধরল। কিছু বুঝার আগেই আসিফের কাজ দেখে নিপা ভরকে যাচ্ছে। আসিফ হঠাৎ এমন!
.
নিপা আসিফের নিচে শুয়ে ছটফট করছে। আসিফ নিপাকে রেপ করতে শুরু করেছে। নিপা অনেক চেষ্টা করেও ছুটতে পারছেনা। আসিফের শরীরের শক্তি অনেক বেশি মনেহচ্ছে।
.
আসিফ তার নিজের কাজ শেষ করতেই নিপাকে ছেড়ে দিল। নিপার বিছানা ছেড়ে উঠার মত শক্তি নেই। দেহটা নিথর হয়ে আছে। আসিফ নিপাকে ছেড়ে চুপ করে বসে নেই। চেয়ার ধরে আছড়াতে শুরু করেছে। চেয়ারের পা খোলার চেষ্টা করছে।
.
আসিফ চেয়ারের পা খুলে নিপার দিকে এগিয়ে আসছে। নিপা চিৎকার করতে পারছেনা। তবুও বাচার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আসিফ চেয়ারের পা দিয়ে নিপার মাথায় সজোরে আঘাত করল। নিপার মাথা থেকে রক্ত ঝরছে। আসিফ আবার'ও আঘাত শুরু করল।
.
-আমাকে ছেড়ে দিন। আমাকে বাঁচতে দিন প্লিজ।
নিপার আকুতিভরা কথা শুনে আসিফ হো হো করে হেসে উঠল। আসিফ হাতের থাকা জিনিসটা দিয়ে আরো সজোরে কয়েকটা আঘাত করল। নিপা এতক্ষণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। তবে আসিফ আঘাত করেই যাচ্ছে।
.
নিপার মাথা থেঁতলে গিয়েছে। এতক্ষণে নিশ্চিত, নিপা বেঁচে নেই। আসিফ কপালের ঘাম মুছে শার্ট গায়ে দিল। নতুন প্যান্ট পরে নিপার দিকে তাকিয়ে আবার হাসি দিল। আসিফের কাজ শেষ। এবারে এখান থেকে চলে যাওয়ার পালা।
.
আসিফ নিপাদের বাড়ির সামনে এসে একটা সিগারেট ধরাল। আজ বেশি ধোয়া বের হচ্ছে। একজন সাইকো খুশি হয়ে সিগারেটের ধোঁয়াও বেশি মনেহচ্ছে। অনেকদিন পরে আজ সিগারেটে টান দিচ্ছে আসিফ।

কেউ ভাল না বাসলে

_____ পূর্ণেন্দু পত্রী

কেউ ভাল না বাসলে আর লিখব না কবিতা।
কত ভালবাসা ছিল বাল্যকালে।
পুকুর ভর্তি এলোচুলের ঢেউ
কলমীলতায় কত আলপনা
কত লাজুক মুখের শালুক
যেন সারবন্দী বাসরঘরের বৌ।
এক একটা দুপুর যেন
রূপসীর আদুল গা
রাত্রি কারো চিকন চোখের ইশারা।
সর্বনাশের ভিতরে কত ছোটাছুটি ছিল
বাল্যকালে
জ্যোৎস্নার আঁচল ধরে কত টানাটানি ছিল
বাল্যকালে
জরির পাড় বসানো কত দিগদিগন্ত ছিল
বাল্যকালে।
কেউ ভাল না বাসলে আর লিখব না কবিতা।

কথোপকথন- ২

––– পুর্ণেন্দু পত্রী

এতো দেরী করলে কেন? সেই কখন
থেকে অপেক্ষা করছি।
- কি করবো বলুন ম্যাডাম? টিউশনি শেষ
করে বাইরে তখন ঝুম বৃষ্টি। আমার জন্যে তো আর
গেইটের বাইরে মার্সিডিজ
দাঁড়িয়ে থাকে না যে ড্রাইভারের কুর্নিশ
নিতে নিতে হুট করে ঢুকে পড়বো। তাই ঝুম
বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, কাদা-জল ভেঙ্গে, গরীবের
গাড়ি মানে দু’পায়ের উপর ভরসা করেই আসতে হয়
আপনার আমন্ত্রণ রক্ষা করতে। তবে আজ
রিক্সায়
করে এসেছি নইলে একেবারে কাকভেজা হয়ে যেতাম।
রিক্সা খুঁজে পেতেই যা দেরী হলো।
: ইস্ বেশ ভিজে গেছো দেখছি। কাছে এসো তো,
রুমাল দিয়ে মুছে দিই।
- ওহো, আমি তো ভেবেছিলাম তোমার শাড়ির আঁচল
দিয়ে মুছিয়ে দেবে। ঠিক আছে, রুমালই সই।
: না মিস্টার, ওটা ভবিষ্যতের জন্য জমা থাকুক।
যখন তোমার বউ হবো তখন ইচ্ছেটা পূরণ হবে।
- আচ্ছা। আর যদি তা না হও,
তবে আমি বুড়ো বয়েসে পান চিবোতে চিবোতে কোন
এক বাদলঘন দিনে বসে বসে রোমন্থন
করবো আজকের এই রুমালি ভালোবাসাময়
সময়টাকে। নাতিপুতিকে তখন প্রথম প্রেমিকা আর
এই রুমালটার গল্প শোনাবো।
: প্লিজ, এভাবে বলো না। কেন
আমি তোমাকে পাবো না? তুমি কি আমাকে চাও না?
আমাকে ভালোবাসো না?
- উত্তরটা আসলে একটু কঠিন। তোমাকে চাই
আবার চাই না। ভালোবাসি আবার বাসি না।
: হেয়াঁলি রাখো। আমি স্পষ্ট জানতে চাই।
- তবে শোন। আমার প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামের
নির্মম বাস্তবতা তোমার জানা নেই। সেই
জীবনে তুমি কখনো অভ্যস্ত হতে পারবেও না।
তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?
: হ্যাঁ, করো।
- একটু আগে একটা টং-এর দোকানের
ছাউনিতে গা বাচিয়ে রিক্সা খুঁজছিলাম। খুব শীত
শীত লাগছিলো, তখন চা খেয়েছিলাম ভাঙ্গা কাপে।
আধধোয়া সে কাপে লেগেছিলো অনেক
মেহনতি মানুষের ঠোঁটের ছোঁয়া, লেগেছিলো থুতুও
যা এখনো আমার ঠোঁটে লেগে আছে।
তুমি কি পারবে সেই ঠোঁটে চুমু খেতে?

হাজার বর্ষ আগে

___ জীবনানন্দ দাশ

সেই মেয়েটি এর থেকে নিকটতর হ'লো না;
কেবল সে দূরের থেকে আমার দিকে একবার তাকালো
আমি বুঝলাম
চকিত হয়ে মাথা নোয়ালো সে
কিন্তু তবুও তার তাকাবার প্রয়োজন—সপ্রতিভ হয়ে
সাত—দিন আট—দিন ন—দিন দশ
সমস্ত চোখ দিয়ে আমাকে নিদিষ্ট করে
অপেক্ষা করে-- অপেক্ষা করে
সেই মেয়েটি এর থেকে নিকটতর হ'লো না;
কারণ আমাদের জীবন পাখিদের মতো নয়
যদি হ'ত
সেই মাঘের নীল আকাশে
আমি তাকে নিয়ে একবার ধবলাটের সমুদ্রের দিকে চলতাম
গাঙশালিখের মতো আমরা দু'টিতে
আমি কোন এক পাখির জীবনের জন্য অপেক্ষা করছি
তমি কোন এক পাখির জীবনের অপেক্ষা করছো
হয়তো হাজার বছর পরে মাঘের নীল আকাশে
সমুদ্রের দিকে যখন উড়ে যাবো
আমাদের মনে হবে
হাজার বছর আগে আমরা এমন উড়ে যেতে চেয়েছিলাম।

কালো ছায়া

কালো মেঘ ছেয়ে গেছে
নীল আকাশটা জুড়ে,
আঁধার যেন গ্রাস করেছে
শূন্যের বুকটা ছিঁড়ে।
নিস্তব্ধ হয়েছে কেন
বিষন্ন এই পৃথিবী?
কেন আজ হারিয়েছে
তার মাধুর্য সবই?
বাতাস যেন ভুলেছে তার
অবিরাম পথ চলা,
কঠোর হাতে কে করছে
এই নিষ্ঠুর লীলাখেলা?
ক্লান্ত পথিক হেঁটে যেতে
বিমর্ষ চোখে চায়-
একটু আশার আলো যদি
কোথাও খুঁজে পায়!
থেমে গেছে কেন আজ
পাখিদের কলরব?
আকাশ কেন হয়েছে আজ
কেবলি নিশ্চুপ নীরব?
পথিক ভাবে হঠাৎ আজ
কে করলো দ্রোহ?
উত্তর না পেয়ে তার
ভেঙ্গে গিয়েছে মোহ।
নিরব রাস্তা একাকী রয়
এতটুকু নাই প্রাণ-
দেখে তাই পথিকের মন
করে ওঠে আনচান।
সূর্য্য অভিমান করে কেন
লুকিয়ে ফেলেছে মুখ?
কিসের এত ব্যথা বেদনা,
কিসের এত দুখ?
চলতে চায় না যে আর
থমকে গিয়েছে সময়,
বারবার কেন যেন
মনে পড়ছে সময়!
মনের আকাশেও আজ তাই
কালো মেঘ গেছে ছেয়ে,
শূন্য হৃদয় হাহাকার করে
শুধু তোমায় না পেয়ে...