আজ আকাশটা মেঘলা, তাই একটু বের হইছি ঘুরতে। মেঘলা দিনে একটা ভয়ংকর সুখ কাজ করে ঘুরার মাঝে। যেমন, কখন বৃস্টি পরা শুরু হয়, কখন দৌড় দিতে হবে । ঘর বাড়ি না ফেলে কচু পাতা নিয়ে মাথায় দিয়ে হাটা। তাই মেঘলা আকাশ মানে চুরি করা ভয়ংকর সুখের মতো।
বৃস্টি হবে হবে করেও হচ্ছে না, ব্রিজটার কিনারে বসে আছি। কোনো একটা কান্নার শব্দ কানে ভেজে ওঠলো। চার দিকে দেখলাম। হঠাৎ একটা মেয়ে দেখে চমকে ওঠলাম।
মেয়েটা জামাটা চার দিকে ছড়িয়ে মাঝখানে বসে আছে, খুব গাঢ় করে কাজল দেওয়া, চুল গুলা ছাড়ানো, মুখে কোনো লাল, খয়ারি রং নেই। শ্যামলা বর্নের একটা মেয়েকে এতো সুন্দর আগে কখনো লাগেনি।
চার দিকে তাকাচ্ছে, আমি কাছে গেলাম। মেয়েটা কান্না বাড়িয়ে দিয়ে বসে আছে, খানিকটা ঘাবড়ে গেলাম। তার পর ও সাহস করে বলাম।
কি হইছে আপনার?
মেয়েটা খিল খিল করে হেসে ওঠলো। আবাক হয়ে তাকিয়ে আছি, এতো সুন্দর করে মানুষ হাসতে পারে?
আমি অবাক হয়েই প্রশ্ন করলাম হাসতেছেন কেনো?
মেয়েটা হাসতে হাসতে জামাটা দুহাতে একটু উপরে তুলে দৌড় দিলো আর বেনিস হয়ে গেলো।
এই ভাবে কিছু একটা হবে ভাবি নাই, তার পর বৃস্টিতে ভিজে ১০৫ ডিগ্রি জ্বর তুলে বসে রইলাম।
চার দিন পর আবার গেলাম।
মেয়েটা একটা নীল রং এর শাড়ি পরে, আমার পাশে এমে বসে পড়লো।
মেয়েটা হাত বাড়ি বলা শুরু করলো,
আমি ছবি, আপনি?
জয়!
হুম,আসলে সরি,আপনাকে ভয় দেখাতে ঐদিন এই কান্নার অভিনয়টা করছি। আপনি প্রায় সময় এসে বসে থাকেন এইখানে, আপনাকে দেখি কিন্তু কথা বলার সাহস হয়নি। তাই ভয় দেখিয়ে কথা বলতে চাইলাম। কিন্তু লজ্জায় আর আপনার ভয়ে দৌড় দিয়েছিলাম।
না ঠিক আছে, আমি কিছু মনে করি নি।
তাহলে এতো দিন আসেন নি কেনো?
আসলে বৃস্টিতে ভিজে জ্বর এসে গেছিলো তাই আসতে পারি নাই।
আমরা কি বন্ধু হতে পারি?
ভেবে দেখতে হবে...
ঐ ঐ আমি কি প্রপ্রোজাল করতেছি নাকি যে ভাবতে হবে?
হাহা আচ্ছা ঠিক আছে বন্ধু হলাম।
হাতটা বাড়িয়ে দেন তাহলে..
কেনো?
আরে বাবা বন্ধুত্বের শুরু তো এইভাবে করতে হয়।
ও জানতাম না তো!
আপনি তো বোকা তাই।
আচ্ছা ছবি আজকে উঠি, পরে কথা হবে। বেলা অনেক হল।
আর একটু থাকো না প্লীজ!!
না,আসলে একটু কাজ আছে যেতে হবে। সরি।
এই ভাবেই বন্ধুত্বটা যাচ্ছিলো, ছবিরা হল আমাদের পাশের এলাকার বড় লোক পরিবারের একমাএ মেয়ে, আর আমি হলাম একজন পিতা ছাড়া সন্তান যার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছে। এখন ছোট খাটো একটা কেরানির চাকরি করি। সবই ছবি জানে, যেহেতো বন্ধু আমরা।
আমাদের বন্ধুত্বের দু বছর পূণ হল যেদিন, সেদিন কোথাই থেকে জানি ও আসলো। কে জানে চুল, কাপড় এবং কথা ও কেমন অচেনা লাগছে আমার কাছে ।
কি হইছে ছবি? তোমাকে এমন লাগছে কেনো?
আসলে বাসা থেকে পালিয়ে আসছি.
কেনো?
বাবা আমার জন্য বিয়ে দেখতেছে, তাই তোমার কথা বলছি, এই জন্য...
Wait wait wai..আমার কথা মানে?
তোমাকে ভালোবাসি এটা বলছি!!
তুমি পাগল? আমি কি কখনো বলছি তোমায় আমি ভালোবাসি?
না!
তাহলে এমন বোকামী করতে গেলে কেনো?
আমি তো ভাবছি তুমিও.. ( কান্না করা অবস্থায় মাটিতে বসে)
দেখো এটা সম্ভাব না, আমি কোথাই আর তুমি কোথাই? আমার ঘরে বৃস্টি এলে টপ টপ করে পানি পরে, ঝড় হলে ভয়ে থাকি, মা ছেলে থাকতে খারাপ অবস্থা আর তোমাকে?
প্লীজ ফিরিয়ে দিও না,আমি প্রথম দিন থেকে তোমার একাকিত্বকে ভালোবেসে ফেলছি, তুমি না বুঝলে আমি কি করবো?
দেখো ছবি যা সম্ভাবনা তা নিয়ে আমি ভাবছি না, আবেগ কে স্থান দিতে নাই। কবিতার পাতায় মানায়, ঘরের চালে বৃস্টির ফোটা ভালোবাসা ভিলায়, গল্প হয় চাদের মেয়ে মাটিতে বাস করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা মাটির নিচে কবর দেওয়া জীবিত মানুষের মতো মিথ্যা।
কথা গুলা বলে চলে আসলাম, সত্যি বলতে ভালোবাসি না আমি তাকে। কিন্তু মিসিং বা ফিলটা আমায় ভাবায়। অনেক মিস করি তাকে যখন একলা হই, তাই নিজেকে বিজি রাখি কাজে।
১ সাপ্তাহ পর আম্মা বলো মেয়ে দেখতে যাবে, আমিও কোনো কিছু না ভেবে চলে গেলাম। চাচা, মামারা পছন্দ করে বিয়ে করিয়ে দিলো। আলাদা কথা বলার সুযোগও দিলো না। মেয়েও দেখলাম না, মায়ের পছন্দের কথা ভেবে বিয়েটা করে চলে আসলাম।
কাজিনরা রুমে ডুকিয়ে চলে গেলো। তবে সবাই কেমন জানি মিট মিট হাসছে এটার রহস্যটাই বের করতে পারলাম না।
বাসর ঘরে ডুকে, দেহি বৌ আমার সালাম করতে আসছে, তাও ভালো ছিলো পরের স্টেপ থেকে। গুমটা খোলতে দেখি একটা মেয়ে কালি, হাতে মুখে,কেমন দাগ আর ক্ষত!
চিৎকার দিয়ে পড়ে গেলাম।
চোখ খোলে দেখি, মা,চাচা,চাচীরা সাথে কাজিনরা। সবাই হাসতেছে। মাকে বলার আগেই দেখি ছবি সামনে দাড়িয়ে আছে।
আর বুঝার বাকি রইলো না, কাহিনী কি ছিলো।
হুম, পরে ও বলো। ফিরিয়ে দিয়েছিলাম বলে এই শাস্তিটা দিয়েছে আমায়।
ভালোবাসা টা আসলে এমনই হয়, নিজের জন্য সব করা যায়। কারণ ভালোবাসাটা হল পূরাটাই স্বার্থের খেলা ।
তবুও ভালোবাসাটা খুব দরকার এই বোকা পৃথিবীর জন্য।
0 comments:
Post a Comment