––– পুর্ণেন্দু পত্রী
এতো দেরী করলে কেন? সেই কখন
থেকে অপেক্ষা করছি।
- কি করবো বলুন ম্যাডাম? টিউশনি শেষ
করে বাইরে তখন ঝুম বৃষ্টি। আমার জন্যে তো আর
গেইটের বাইরে মার্সিডিজ
দাঁড়িয়ে থাকে না যে ড্রাইভারের কুর্নিশ
নিতে নিতে হুট করে ঢুকে পড়বো। তাই ঝুম
বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, কাদা-জল ভেঙ্গে, গরীবের
গাড়ি মানে দু’পায়ের উপর ভরসা করেই আসতে হয়
আপনার আমন্ত্রণ রক্ষা করতে। তবে আজ
রিক্সায়
করে এসেছি নইলে একেবারে কাকভেজা হয়ে যেতাম।
রিক্সা খুঁজে পেতেই যা দেরী হলো।
: ইস্ বেশ ভিজে গেছো দেখছি। কাছে এসো তো,
রুমাল দিয়ে মুছে দিই।
- ওহো, আমি তো ভেবেছিলাম তোমার শাড়ির আঁচল
দিয়ে মুছিয়ে দেবে। ঠিক আছে, রুমালই সই।
: না মিস্টার, ওটা ভবিষ্যতের জন্য জমা থাকুক।
যখন তোমার বউ হবো তখন ইচ্ছেটা পূরণ হবে।
- আচ্ছা। আর যদি তা না হও,
তবে আমি বুড়ো বয়েসে পান চিবোতে চিবোতে কোন
এক বাদলঘন দিনে বসে বসে রোমন্থন
করবো আজকের এই রুমালি ভালোবাসাময়
সময়টাকে। নাতিপুতিকে তখন প্রথম প্রেমিকা আর
এই রুমালটার গল্প শোনাবো।
: প্লিজ, এভাবে বলো না। কেন
আমি তোমাকে পাবো না? তুমি কি আমাকে চাও না?
আমাকে ভালোবাসো না?
- উত্তরটা আসলে একটু কঠিন। তোমাকে চাই
আবার চাই না। ভালোবাসি আবার বাসি না।
: হেয়াঁলি রাখো। আমি স্পষ্ট জানতে চাই।
- তবে শোন। আমার প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামের
নির্মম বাস্তবতা তোমার জানা নেই। সেই
জীবনে তুমি কখনো অভ্যস্ত হতে পারবেও না।
তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?
: হ্যাঁ, করো।
- একটু আগে একটা টং-এর দোকানের
ছাউনিতে গা বাচিয়ে রিক্সা খুঁজছিলাম। খুব শীত
শীত লাগছিলো, তখন চা খেয়েছিলাম ভাঙ্গা কাপে।
আধধোয়া সে কাপে লেগেছিলো অনেক
মেহনতি মানুষের ঠোঁটের ছোঁয়া, লেগেছিলো থুতুও
যা এখনো আমার ঠোঁটে লেগে আছে।
তুমি কি পারবে সেই ঠোঁটে চুমু খেতে?
0 comments:
Post a Comment