এই, এই কে ওখানে, এদিকে আসতে বলছি। যলদি আসো, না আসলে একদম থাবড়ায়ে দাঁত ফেলে দেবো।
: স্যার এসেছি, থাবড়া দিলে বাম গালে দেন কারন একটা দাঁত অনেকদিন থেকে ব্যথা করছে। ডেন্টিস্টের কাছে যাবার টাকা নেই। একটা থাবড়া দিয়ে দাঁতটা ফেলে দিন।
: এই তোর সাহস কত্ত বড় পুলিশের সঙ্গে বাইচলামি করিস? নাম কি তোর?
: স্যার আমি হিমালয় ডাক নাম হিমু । অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু না, শুধু হিমু।
: শালা তোর সাহস দেখে অবাক হচ্ছি, পুলিশের সাথে কমেডি করিস এই একে গাড়িতে উঠা। একে ডলা দিতে হবে। ডলা খেলে সব বাইচলামি ভালো হয়ে যাবে। কন্সটেবল, এর ব্যাগ চেক করে দেখেন কি আছে এতে।
হিমুর ব্যাগ উল্টো করে দেবার ফলে সেখান থেকে বের হলো একটা আধা খাওয়া কলা, একটি যদি লাইগা যায় এর চল্লিশ লক্ষ টাকার লটারির টিকেট, একটি কলম, একটি আধা পাঁকা ছোট পেঁপে, একটি আইফোন এবং একটি কাচের সেভেন আপের বোতল।
: সার পাইছি সার। এর ব্যাগের ভেতর থেইকা দেখেন পেট্রল বোমা, দামি মোবাইল পাইছি সার।
: এই মালটা নির্ঘাত দুর্বৃত্ত। পেট্রোল বোমা মারে গাড়িতে, আবার ছিনতাইও করে। একে হাতকড়া সহ গাড়িতে উঠানো হোক।
হিমুকে নিয়ে গাড়ি থানার দিকে ছুটে চলেছে। মাঝ রাতে গাড়িগুলোর পাঙ্খা গজিয়ে যায়। তাইতো এত স্পিডে অনায়াসে চলতে পারে। হিমুর পিঠে খুব চুলকানি হচ্ছে অজানা একটা কারনে। সে অনেক চেস্টা করেও চুলকাতে পারছেনা। সে রুপাকে মনে করতে চেস্টা করলো। আজ সকালে যখন রুপার সাথে দেখা হয়েছে তখন রুপা এবং সে দুজন একসাথে বসে সেভেন আপ খেয়েছে। খালি বোতল তার কাঁধের ব্যাগে রাখার সময় রুপা বলেছে "এই খালি বোতল দিয়ে কি করবে?"। "যারা পেট্রোল বোমা মারে তাদেরকে দেবো। বলবো একটা বাসে বোমা মারুন দেখি কেমন দেখায়। টিভির শোরুমের বাইরে থেকে নিউজে দেখেছিলাম কিন্তু প্রান ভরেনি"। "তুমি আমার এই মোবাইলটা এক সপ্তাহের জন্য তোমার কাছে রাখো, তোমার হাবভাব সুবিধার না। এটায় ইন্টারনেট আছে। প্রতি এক ঘন্টা পর পর আমি তোমাকে ভিডিও কল করবো এবং দেখবো তুমি কি করছো"।
এইসব কল্পনা করেও পিঠের চুলকানি কমছেনা। বরং আরো বাড়ছে মনে হচ্ছে। তাদের গাড়ি ধানমন্ডি থানায় নামলে হিমু ওসিকে...
হিমু : স্যার আমার পিঠে অনেক চুলকোচ্ছে, একটু হাতকড়াটা খুলে দেন প্রানভরে চুলকিয়ে নেই।
ওসি : মা....দ, তোকে এনেছি এখানে ইশপিশাল ডলা দিতে, আর তুই বলছিস তোকে চুলকা চুলকি করতে দিতে? তোর চুলকানি আমি এমন দিক দিয়ে ভরবো যে সারা জীবনের জন্য টুটটুটটুট হয়ে যাবি।
হিমু : স্যার আমি কি আজ রাতে থানায় থাকবো?
ওসি : আসেন মহারাজ, আপনি আপনার সিংহাসনে বসুন। এই কে আছিস, এইটাকে ওই কোনের ঘরে রাখ। এর জন্য "ইশপিশাল ডলা"দরকার।
হিমু একটি তীব্র দূর্গন্ধযুক্ত ঘরে বসে আছে। প্রথম প্রথম একটু খারাপ লাগলেও এখন আর মন্দ লাগছেনা। তার কিছু দূরে চাদরে ঢেকে কেউ একজন শুয়ে আছে। হিমুকে দেখে চাদর সড়িয়ে কাছে এসে লোকটা...
: আরে কি সৌভাগ্য আমার, হিমু ভাই দেখি আমার সাথে হাজতবাসী। আমার মা যদি এই দৃশ্য আপন চৌক্ষে দেখিতে পাইতো তবে নির্ঘাত সুইসাইড খাইতো। আমাকে চিনতে পেরেছেন হিমু ভাই? আমি জুলমত, কামড়াইন্যা জুলমত। যারে তারে কামড় দেই, তয় কুত্তারে কামড় দেইনা তাগোর রক্তে মজা নাই। বড়লোকের পায়ে কামড় দেই। বিরাট মজা হিমু ভাই বড় লোকের রক্তে।
: তোমাকে চিনতে পেরেছি, কিন্তু তুমি এখানে কেন?
: হিমু ভাই, বাংলাদেশ ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পায়ে কামড় দিয়েছিলাম তাই আমি এইখানে। বড়ই টেস্টি রক্ত তার। একমুঠো রক্ত দিয়া একপ্লেট ভাত বিরাট আরামের সাথে খাওয়া যাবে। তয় হিমু ভাই দুইবার রিমান্ডের মাইর খাবার পর শরীরটা একটু ক্লান্ত তবে আপনারে দেখে সব ক্লান্তি দূর হয়েছে। বলেন, আপনার কথা শুনি, আপনার কথা শুনতে বিরাট আনন্দ হিমু ভাই।
সেই মূহুর্তে গারদে কয়েকজন পুলিশ ঢুকলো। কামড়াইন্যা জুলমত তড়িঘরি করে চাদরের নিচে লুকিয়ে যায়। খুব দ্রুতই হিমুকে উল্টো করে বাঁধা হলো। ওসি সাহেব আসলেন। কনস্টেবল একটা চেয়ার এগিয়ে দিলো কিন্তু ওসি সাহেব বসেও কেন জানি বসলেন না। তিনি উল্টো হয়ে হিমুর দিকে এগিয়ে গেলেন...
ওসি : এবার যত পারিস বাইচলামি কর দেখি। আজকে তোর শরীরের সকল বাইচলামি বের হবে।
হিমু : স্যার উল্টো হয়ে আপনাকে আজব লাগছে। পুরো পৃথিবী উল্টো হয়ে গেছে।
ওসি : তোর তেজ এখনই কমানোর ব্যবস্থা করছি, ওই দে ওই মোটা লাঠিটা দে দেখি।
হিমু : স্যার আপনি বেশি নড়বেন না, আপনার পাছায় পাইলস হয়েছে, কয়েকদিন পরই অপারেশন। এখন ফেটে গেলে সমস্যা না স্যার?
ওসি সাহেব পুরোপুরি ভড়কে গেলেন। পাইলসের কথা তার বৌ এবং ডাক্তার ছাড়া কেউ জানেনা। ঠিক তখন জুলমত...
জুলমত : খবরদার কেউ হিমু ভাইয়ের গায়ে টাচ করবেনা, একদম কাঁচা খায়ে ফেলবো বলে দিলাম। এমন কামড় দেবো তার কয়েক বংশ কুত্তার ছাও জন্ম দেবে।
ওসি : এই একে এর আগে কয়বার ডলা দেয়া হয়েছে?
কনস্টেবল : স্যার দুইবার ডলা হজম করেছে হারামজাদা। আরো কয়েকবার লোড নিতে পারবে বলে মনে হয়। তারে কি আবার ডলা দেবো?
ওসি : হুম দাও, এবারের ডলা ইশপিশাল হতে হবে।
ওসি সাহেব সামনে এসে হিমুর চুলের মুঠি ধরে ঘুশি দেবার আগ মূহুর্তে কোথাও সুন্দর শব্দে কিশোর কুমারের "হাওয়ায় মেঘ সড়ায়ে ফুল ঝরায়ে" গানের রিংটোন বেজে উঠলো। সেই সাথে ঠিক পাশেই জুলমতকে উল্টো ঝুলিয়ে ওসি সাহেবের "ইশপিশাল ডোজ" দেয়া হচ্ছে। জুলমতের চিৎকার এবং গানের শব্দে একটা অভূতপূর্ব কম্বিনেশন তৈরি হয়েছে এই গারদখানায়। হিমুর ব্যাগ থেকে ওসি সাহেব আইফোনটা বের করলেন। একটা ভিডিও কল এসেছে, রুপা ফোন করেছে। ওসি সাহেব কল রিসিভ করলেন।
রুপা : হ্যালো হিমু তুমি উল্টো হয়ে আছো কেন? আর তোমার পাশে চিৎকার কে করছে?
হিমু : আমি এখন রিমান্ডে আছি। একটু পরই আমাকে "ইশপিশাল ডলা" দেয়া হবে, দোয়া রেখো আমার জন্য। আর ওটা জুলমতের চিৎকারের আওয়াজ।
রুপা : তুমি রিমান্ডে কেন? ওই ,ওই জুলমত কে?
হিমু : ঐযে তোমার সাথে বসে সেভেন খেলাম না? সেটার খালি বোতল আমার কাছে ছিল, তাই ওসি সাহেব আমাকে পেট্রোল বোমারু মনে করে "ইশপিশাল ডলা" দেবেন এখন। আর জুলমত হচ্ছে কামড়াইন্যা জুলমত। সে বড় লোকদের পায়ে কামড় দিয়ে রক্ত টেস্ট করে দেখে সেটা মিস্টি কি না। আচ্ছা তোমার বাবা কি বুটজুতো পড়েন?
রুপা : তুমি রিমান্ডে থেকে আমার সাথে মশকরা করছো? আমার বাবা বুটজুতো পড়লেই কি আর না পড়লেই বা কি?
হিমু : কামড়াইন্যা জুলমতকে দিয়ে তোমার পাওয়ারফুল বাবার পায়ে একটা কামড় দেয়াতাম।
রুপা : হ্যালো ওসি সাহেব।
ওসি : জী শুনছি বলুন।
রুপা : দেখুন এই হিমুর মানসিক অবস্থা ভালো নয়। একে ডাক্তার দেখানো লাগবে। তার চিকিৎসার খুব প্রয়োজন। আপনি প্লিজ এর দাঁতে হাত তুলবেন না। আমি সকালে তার জামিনের ব্যবস্থা করছি।
ওসি : ঠিক আছে ম্যাডাম।
সকাল বেলা হিমু কামড়াইন্যা জুলমতকে সাথে করে রুপাদের বাড়ির বাইরে দাড়িয়ে আছে। রুপা এখন বাসায় নেই, রুপার বাবা বাগানে বসে পত্রিকা পড়ছেন। জুলমত আস্তে করে গেটের ফাঁক দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে পেছন দিক দিয়ে রুপার বাবার ঠিক পায়ের কাছে এসে হিমুর দিকে চকচকে লোভাতুর চোখে তাকালো। সেই চোখে আনন্দ, তীব্র আনন্দ। হিমু তীব্র কোন কিছুই সহ্য করতে পারেনা। সে সেখান থেকে চলে আসে। কয়েক সেকেন্ড পরই রুপার বাবার গগনবিদারি চিৎকারে পুরো এলাকা কেঁপে উঠলো।
হিমু রুপার পছন্দের যায়গার খুব কাছে এসে পরেছে। ঐতো রুপা বসে আছে। রুপার হাতে একটি লাল টুকটুকে গোলাপের তোড়া। হিমু জানে এগুলো এয়ারকন্ডিশন ওয়ালা দোকানের ফরমালিন ওয়ালা গোলাপ না। এগুলো রুপার বাগানে রুপার নিজের হাতে বোনা গাছের গোলাপ। হয়তো এই গোলাপের মাঝেও কিছুটা ফরমালিন দেয়া আছে কিন্তু হিমু শিওর রুপার তার প্রতি যে ভালোবাসা সেটায় কোন ফরমালিন দেয়া নেই।
ঐতো রুপা তার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। রুপাকে এখন অনেক সুন্দর লাগছে, তীব্র সুন্দর। কিন্তু হিমু তীব্র কিছু সহ্য করতে পারেনা। হিমু তাহলে আবেগে বাঁধা গোলাপের তোড়া হয়ে যায়। মহাপুরুষদের আবেগ থাকলে চলেনা। হিমু উল্টো দিকে ফিরে চলে আসতে শুরু করে।
Wednesday, August 24, 2016
Home »
» হিমুর চোখে জল
হিমুর চোখে জল
Related Posts:
সাইকো-আসতে পারি? মোটা ফ্রমের চশমাটা চোখের দিকে আরেকটু এগিয়ে আসিফ দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে। নিপা তার রুমে বসে হুমায়ন আহমেদের একটা উপন্যাস পড়ছিল। বই থেকে চোখ উঠিয়ে আসিফকে দেখে বিছানা থেকে নেমে এল। আসিফের সামনে এসে বলল -স্যার। ভেতরে আ… Read More
★ভালোবাসার উপহার★ - খবরদার একদম ঘরে ঢুকবে না, বাইরে দাঁড়িয়ে থাক । -- তাহলে দরজা খুলেছ কেন ? -- দরজা খুলেছি তোমাকে দেখার জন্য । -- আমার অপরাধটা কি বলবে তো ? -- তোমার কাছে ঘড়ি আছে ? -- আছে তো -- টাইম দেখ কয়টা বাজে -- দশটা টা বাজে মাত্র -- অফিস… Read More
কেউ ভাল না বাসলে _____ পূর্ণেন্দু পত্রী কেউ ভাল না বাসলে আর লিখব না কবিতা। কত ভালবাসা ছিল বাল্যকালে। পুকুর ভর্তি এলোচুলের ঢেউ কলমীলতায় কত আলপনা কত লাজুক মুখের শালুক যেন সারবন্দী বাসরঘরের বৌ। এক একটা দুপুর যেন রূপসীর আদুল গা রাত্রি কারো চিক… Read More
Iqbal memorial govt. degree College Iqbal memorial govt. degree College … Read More
কথোপকথন- ২ ––– পুর্ণেন্দু পত্রী এতো দেরী করলে কেন? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি। - কি করবো বলুন ম্যাডাম? টিউশনি শেষ করে বাইরে তখন ঝুম বৃষ্টি। আমার জন্যে তো আর গেইটের বাইরে মার্সিডিজ দাঁড়িয়ে থাকে না যে ড্রাইভারের কুর্নিশ নিতে নিতে হুট কর… Read More
0 comments:
Post a Comment