ROBIN RAHMAN

Videos

Wednesday, August 24, 2016

আমার শূন্য আকাশ

আধো আলো আধো ছায়া। নির্জন চারদিক। রাত
১০টা বাজে। আশিক বড় একটা বট গাছের নিচে বসে
আছে। সামনে একটা বাড়ি। বাড়িটা খুব সুন্দর করে
সাজানো। পুরো বাড়ি জুরে ছোট ছোট মরিচ
বাতি। লাল নীল হলুদ মরিচ বাতিগুলো জ্বলছে...তার
সাথে জ্বলছে আশিকের বাম পাশে থাকা টকটকে
লাল হৃদপিণ্ডটাও। আশিক বিশেষ একজনের জন্য
অপেক্ষা করছে...কিন্তু সে এখনো আসছে
না...কিছুক্ষণ পর দূর থেকে আশিক শানাই এর শব্দ
শুনতে পেলো। শানাই এর শব্দ কানে আসতেই
আশিকের বুকটা ধুক করে উঠলো। ঝলঝল
চোখে আশিক দেখছে দূর থেকে একটা
কালো বিয়ের গাড়ি তার দিকে ধিরে ধিরে এগিয়ে
আসছে। গাড়িটা যতই কাছে আসছে আশিকের
বুকের ব্যাথাটা যেন ততই বেড়ে যাচ্ছে। আস্তে
আস্তে করে গাড়িটা বাড়ির পাশে এসে থামল। বাড়ির
দারোয়ান গেট খুলে দিলো। গেটের সামনে
দাঁড়িয়ে আছে বরের মা,বোন, বাবা আর অল্প কিছু
আত্মীয় স্বজন। বরের বোন গাড়ির দরজা খুলে
দিলো। গাড়ি থেকে একটা পা মাটি স্পর্শ করার সাথে
সাথেই টুপ করে এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো
আশিকের চোখ দিয়ে। পরবর্তী পা মাটিতে রাখার
পর আশিক দাঁতে দাঁত ঘেঁষে তার একটা হাত দিয়ে
সে তার বুকের বামপাশটা শক্ত করে চেপে ধরল।
নাহ! আশিক আর পারছেনা...নিঃশ্বাস নিতে আশিকের
খুব কষ্ট হচ্ছে।একটা লাল টুকটুকে শাড়ি পরা মেয়ে
গাড়ি থেকে নামলো অবশেষে। এরপর মেয়েটা
মেহেদী রাঙ্গা হাত দিয়ে যখন গাড়ির দরজা বন্ধ
করতে যাবে ঠিক তখনি তার চোখ আটকে
গেলো বাড়ির সামনে থাকা বড় বট গাছটার দিকে। বট
গাছের ছায়ার কারনে সেখানে কে বসে আছে
সেটা স্নিগ্ধা বুঝতে পারছে না। আশিক স্নিগ্ধাকে
এভাবে বট গাছের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে
আশিক আস্তে করে তার মুখটা একটু সামনে
আনলো...মুখটা সামনে আনতেই চাঁদের আলো
এসে পরলো আশিকের মুখে...চাঁদের
আলোতে যখন স্নিগ্ধা আশিকের চেহেরা
দেখতে পেলো স্নিগ্ধা আস্তে করে চোখ
দুটো বন্ধ করে ফেললো। এই দৃশ্য দেখার
মতো সাহস স্নিগ্ধার নেই। স্নিগ্ধা চোখ বন্ধ
রেখেই আস্তে করে গাড়ির দরজাটা লাগিয়ে
দেয়। এরপর মুখ ঘুরিয়ে স্নিগ্ধা সবার সাথে হাঁটা
ধরে বাড়ির সামনের দিকে। হেঁটে যাওয়ার সময়
মাঝে মাঝে আড়চোখে পিছন ফিরে স্নিগ্ধা
আশিকের দিকে তাকাচ্ছিল। বোকা ছেলেটা তখন
ঝলঝল চোখে তার প্রিয়তমার চলে যাওয়া দেখছিল
আর পাগলের মতো হাসছিল।দূর থেকে বাড়ির ৩
তলার বাসর ঘড়টা দেখা যাচ্ছে। কি সুন্দর করেই না
বাসর ঘড়টা সাজানো। জানালাটা খোলা...আশিক বট
গাছের নিচে বসে জানালা দিয়ে সব দেখতে
পারছে...একটা মেয়ের জ্যান্ত লাশ সে বাসর ঘরে
প্রবেশ করলো। তার ঠিক ২০মিনিট পর প্রবেশ
করলো স্নিগ্ধার স্বামী। আশিক কিছুক্ষণ পর রুমের
আলো নিভে যেতে দেখল... স্নিগ্ধার স্বামী
জানালার কাছে এসে আস্তে করে বন্ধ করে
দিলো জানালাটা। এরপর স্নিগ্ধার স্বামীকে জানালার
পাশে থাকা পর্দাগুলো টেনে দিতে দেখে
আশিক আস্তে করে দু চোখ বন্ধ করে
ফেললো। চোখ দুটো বন্ধ হতে না হতেই
আশিকের চোখের এক কোণা দিয়ে অশ্রু
গড়িয়ে পরলো। আশিক আবার তার এক হাত দিয়ে
শক্ত করে তার বুকের বাম পাশটা চেপে ধরল। রাত
ঘনিয়ে ভোর হল। সকাল ৬টা বাজে। সে বাড়ির
সামনে একটা এ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির
চারপাশে মানুষের অনেক ভিড়। শুধু বাড়ির সামনে না
বট গাছের নিচেও মানুষের অনেক ভিড় দেখা
গেলো।কিছুক্ষণ পর স্নিগ্ধার বাবা মা এলো।
স্নিগ্ধার বাবা কাঁদতে কাঁদতে স্নিগ্ধার স্বামীকে
জিজ্ঞেস করলো
-এটা কেমনে করে ঘটলো বাবা?
-ডাক্তার বলেছে ও মাঝরাতে হার্টএটাক করে।
আসলে আমি রুমে ঢুকার পর থেকেই দেখছিলাম
ও অবিরাম কান্না করছিলো। আমি কিছুক্ষণ ওকে
শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু ওর কান্না কিছুতেই
থামছিল না। অবশেষে বিরক্ত হয়ে আমি ঘুমিয়ে পরি।
মাঝরাতে ওর পায়ের সাথে আমার পা ধাক্কা লাগে।
ধাক্কা লাগাতে আমি খানিকটা ভয় পাই। ওর পা তখন খুব
ঠাণ্ডা ছিল। আমি লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে আব্বু আম্মু
সবাইকে রুমে নিয়ে আসি। বাকিটা আর বলতে
ইচ্ছে করছে না। আপনি এটা কেন করলেন?
-স্নিগ্ধার বাবা ভ্রু কুচকে কাপা কাপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস
করলো...আমি আবার কি করলাম?
স্নিগ্ধার স্বামী বট গাছের দিকে এক আঙুল তুলে
ইশারা করে বলে...ওই যে দেখেন...এই
ছেলেটাও মাঝরাতে হার্টএটাক করে মারা
গেছে...সবচেয়ে অবাক করে দেওয়ার মতো
বিষয় টা কি জানেন? তারা দুজনেই একই সময় হার্টএটাক
করে মারা যায়। এভাবে জোর করে আপনার
মেয়েকে বিয়া না দিলেও পারতেন। আমাদের
কাছে এখন সব কিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে। আপনি
কাজটা ঠিক করেন নাই।
-স্নিগ্ধার বাবা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
সবাই ভাবছে স্নিগ্ধা আর আশিক মরে গেছে।
আসলেই তারা মরে গেছে। কিন্তু বট গাছের
নিচে একটা ঘুমন্ত ছেলের কাঁধে একটা লাল
টুকটুকে শাড়ি পরা মেয়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে
আছে। হয়তো সেটা কেও দেখতে পারছে না।
দেখবেই বা কি করে...মৃত মানুষকে তো আর
দেখা যায়না।

Related Posts:

  • A Tragical Love Story **this is not my own story, just sharing it*** What can I say about a girl I loved since I was ten... that I love the way she laughs at me when I commit mistakes, the way she fusses over silly things and even the way she … Read More
  • বনলতা সেন -জীবনানন্দ দাশ- হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে, সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে; আমি ক্লান্ত প্রাণ এক… Read More
  • Most Amazing Proposal Ever Read More
  • হলুদ হীমুর নীল বেদনা দৃষ্টির বাহিরে রুপা তাকিয়ে-- আর হিমু, রুপার সেই দৃষ্টিকে বোঝার অপার চেষ্টায় মগ্ন! মাঝে মাঝে হিমুর না বলা ভাষায়, রুপা নিজেকে হারাবার চেষ্টায় বিভোর হয়ে উঠে। রুপার নীল শাড়িতে, আজ যেন নীল জোঁনাকি বাসা বেধেঁছে হিমুর হলুদ প… Read More
  • তোমায় আমি ভালোবাসিএকটি ছেলে একটি মেয়েকে প্রচন্ড ভালোবাসতো, কিন্তু মেয়েটা ছেলেটাকে ভালোবাসতো না। তো ছেলেটা একদিন মেয়েটার কাছে গিয়ে বলল, আমি তোমাকে ভালোবাসি।তুমি কেন বুঝতে পারনা?তোমার খারাপ লাগবে বলে আমি তোমার পিছু নিইনা, তোমার খারাপ লাগ… Read More

0 comments:

Post a Comment